ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ২৯ আগস্ট ২০২৪, ২৩ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সুজনের নানা সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সুজনের নানা সুপারিশ

ঢাকা: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। রাষ্ট্র সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বলে মনে করে এই নাগরিক সংগঠন।

তাই নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব সুপারিশ উত্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। রাজধানীর আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুজন।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো নির্বাচন। আর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি যথাযথ আইনি কাঠামো সৃষ্টি, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধি-বিধান। এর লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ ও অর্থবহ নির্বাচন আয়োজন করে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা অর্পণ।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানায় সুজন। এই বিষয়ে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। আর নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা নির্ণয়ের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও নিয়ম রয়েছে। তাই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

নির্বাচন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং উক্ত আসনসমূহে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে বিবেচনা করা। মনোনয়ন বাণিজ্য অবসানের লক্ষ্যে প্রতিটি দলকে আসনভিত্তিক সংশ্লিষ্ট সকল আসনের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুইজন করে প্রার্থী নির্ধারণ করা এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক উক্ত দুইজনের মধ্য থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান বাধ্যতামূলক করা। প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে কমপক্ষে তিন বছর পূর্বে সংশ্লিষ্ট দলের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা। ভোটার কর্তৃক অপছন্দের প্রার্থীদের বর্জনের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন করা। প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানো, হলফনামার তথ্য প্রচার ও আসনভিত্তিকভাবে প্রার্থী পরিচিতি সভা আয়োজন করা। একইসঙ্গে প্রতিটি আসনে তদারককারী নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয়সীমা মেনে চলা নিশ্চিত করা। বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধান আইনে সন্নিবেশন করা। সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রদানে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা। মনোনয়নপত্র ও হলফনামার ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং বাধ্যতামূলক করা এবং হলফনামা ও আয়কর বিবরণী সাথে সাথেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার বিধান আইনে যুক্ত করা।

এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯২ ও ৯৩ ধারায় বর্ণিত দায়মুক্তির বিধান বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া। সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ভোটার তালিকায় জেহুরা গ্যাপ নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকার সাথে অর্জনকালীন মূল্যসহ বর্তমান বাজারমূল্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করার বিধান করা। হলফামা যাচাই-বাছাই করে অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থীতা বাতিল করা। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনকে যথাযথ করা। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ থাকলে তার কারণ অনুসন্ধান করা।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য নবগঠিত সরকারকে পরামর্শ দিতে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট আবু সাঈদ খান, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ফয়েজ আহমদ তৈয়ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম প্রমুখ।

বৈঠকে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের ভোটার তালিকায় ত্রুটি রয়েছে। ২০০৭ সালের ভোটার তালিকায় পুরুষের তুলনায় ১২ লাখ নারী ভোটার বেশি ছিল। কিন্তু এখন পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা কম। তার মানে এখানে জেন্ডার গ্যাপ হয়েছে। এর কারণ হলো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা করা হয়নি। আওয়ামী লীগের অফিসে বসে এই ভোটার তালিকা করা হয়েছে। এর বিহিত হওয়া দরকার, জেন্ডার গ্যাপ দূরীভূত করা দরকার। এছাড়া ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের মতো যেসব অন্যায় হয়েছে, সেই অন্যায়গুলোর পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়।

যে ছাত্রদের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, সেই ছাত্রদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, সত্যিকার গণতন্ত্র উদ্ধারের পর ভোটারদের ভোট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। ভোটারদের তৃণমূল পর্যায়ে ভোট পরিচালনা, ভোট সংরক্ষণ ও ভোটের ফলাফল নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।